সিম্ফনি মোবাইল এমনিতেই বাংলাদেশে অন্যতম জনপ্রিয় একটি কোম্পানি। তবে তাদের জনপ্রিয়তা এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে গুগল যখন তারা তাদের ব্লগে সিম্ফনির অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান ফোন নিয়ে তথ্য প্রকাশ করে। যদিও সিম্ফনির আগে মাইক্রোম্যাক্স বাংলাদেশে অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান ফোন বাজারজাত করেছে, তবুও দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে দেশে অ্যান্ড্রয়েড ফোন আনার সুনামটা সিম্ফনিই পেয়েছে।
গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। অ্যান্ড্রয়েড জগতের বেশিরভাগ ফোনই যেখানে কমমূল্যের, সেখানে সেসব ফোন ব্যবহারকারীদের নিয়মিত আপডেট থেকে বঞ্চিত না রাখার লক্ষ্যেই গত বছর গুগল অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে। এর মধ্য দিয়ে কমদামে ফোন কিনলেও ব্যবহারকারীরা পাবেন ভালো পারফরম্যান্স ও নিয়মিত আপডেট। গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ভারতের বাজারে প্রথম অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান ফোন উন্মুক্ত হয়। প্রায় চারমাস পর আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের বাজারেও চলে আসে অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান।
অ্যান্ড্রয়েড ওয়ানের জন্য গুগল ইতিমধ্যেই অ্যান্ড্রয়েড ৫.১ ললিপপের ঘোষণা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রথমবারের মতো নেক্সাস ডিভাইসেরও আগে অ্যান্ড্রয়েডের নতুন আপডেট পেতে যাচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান স্মার্টফোনগুলো। আর এ খবর প্রকাশের পর অ্যান্ড্রয়েড ওয়ানের চাহিদা আরো বেড়েছে। তাই অনেকদিন পর অ্যান্ড্রয়েড কথনে আমরা ফিরে আসছি আমাদের জনপ্রিয় সব হ্যান্ডস-অন রিভিউ নিয়ে।
পাঠক ইতিমধ্যেই জানেন আমাদের আজকের রিভিউ Symphony Roar A50 অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান ফোন নিয়ে। যারা শুরু থেকেই আমাদের সঙ্গে আছেন, তারা এও জানেন যে, আমরা সাধারণত একটু ব্যতিক্রমধর্মী রিভিউ করে থাকি। আমাদের রিভিউতে আমরা লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে ফোন নিয়ে রিভিউ লিখে থাকি। ফলে অ্যান্ড্রয়েড কথনের হ্যান্ডস-অন রিভিউতে পাঠকরা পেয়ে থাকেন বাস্তবধর্মী অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা বিস্তারিত সব তথ্য। যেহেতু একেকজন ব্যবহারকারীরা পছন্দ-অপছন্দ একেক রকম হয়ে থাকে, সেহেতু রিভিউর সব দৃষ্টিকোণের সঙ্গে সবাই একমত নাও হতে পারেন। আর সেটাই স্বাভাবিক।
তো চলুন আর দেরি না করে দেখে নেয়া যাক দেশের বাজারে দেশীয় ব্র্যান্ডের প্রথম ফোন, Symphony Roar A50 অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান এর হ্যান্ডস-অন রিভিউ.
স্পেসিফিকেশন
সবাই হয়তো ইতিমধ্যেই সিম্ফনির প্রথম অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান ফোনের হার্ডওয়্যার স্পেসিফিকেশন জানেন। তবুও মনে করিয়ে দেয়ার জন্য চলুন রিভিউর শুরুতেই দেখা নেয়া যাক সিম্ফনির নতুন এই ফোনের হার্ডওয়্যার স্পেসিফিকেশন।
- প্রসেসর: Cortex A7, 1.3 GHz Quad-Core
- গ্রাফিক্স প্রসেসিং: Mali 400 MP2
- র্যাম: 1 GB
- রম: 8 GB
- ক্যামেরা: 5 MP rear and 2 MP front
- ডিসপ্লে: 4.5” FWVGA IPS (480 x 854)
- কানেক্টিভিটি: 3G, WiFi, Bluetooth, GPS
- সিম: Dual-SIM (Both micro SIM)
- সেন্সর: Light, Accelerometer, Gyroscope, G-Sensor, Proximity Sensor
- ব্যাটারি: 1780 mAh
- সিস্টেম: Android 4.4.4 KitKat
- দাম: ৮,৭০০ টাকা
দেখতেই পাচ্ছেন ৮,৭০০ টাকার ফোন হিসেবে সিম্ফনির এই ফোনের স্পেসিফিকেশন মোটেই খারাপ না। তবে কেবল স্পেসিফিকেশনের জন্য সিম্ফনির নতুন ফোনটি নিয়ে সবার এতো আগ্রহ না। বরং, এটি গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান ব্যানারে বাজারে এসেছে। যার অর্থ হলো, সিম্ফনির অন্যান্য ফোনে আপনি অ্যান্ড্রয়েডের নতুন ভার্সন আপডেট পাবেন কি না তার নিশ্চয়তা না থাকলেও, এই ফোনে আপনি নিশ্চিত নতুন সংস্করণ পাবেন। অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা আপডেটের নিশ্চয়তার চেয়ে আর বেশি কী চাইবেন!
গুগল জানিয়েছে, অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান স্মার্টফোনগুলো বাজারে আসার পর থেকে দুই বছর পর্যন্ত অ্যান্ড্রয়েডের আপডেট পাবে। বলা বাহুল্য, দুই বছর অ্যান্ড্রয়েড জগতে বেশ লম্বা সময়। বিশেষ করে স্বল্পমূল্যের একটি ফোনের জন্য দুই বছরের আপডেট পাওয়া নি:সন্দেহে বিশাল ব্যাপার।
ভিডিও রিভিউ
ভিডিও রিভিউ এখনও প্রস্তুত না হওয়ায় আমাদের চ্যানেল থেকে টিজার ভিডিওটি আপাতত রাখা হলো। ভিডিও রিভিউ প্রকাশ হলেই আমরা নতুন পোস্টের মাধ্যমে পাঠকদের জানাবো।
ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি
Symphony Roar A50 অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান ফোনটি হাতে নিলে প্রথমেই আপনার যে প্রশ্নটি মাথায় আসবে, তা হলো ‘ব্যাটারি কি বের করে রাখা হয়েছে?’
আসলেই সিম্ফনির এই ফোনটি অস্বাভাবিক রকমের হালকা। হাতে নিলে মনেই হয় না যে ফোনের ব্যাটারি ভেতরেই রয়েছে। ফোনটির ওজন এতো কম হওয়ার কারণে আমার মতো অনেকেরই ফোনটি বেশ পছন্দ হবে, আবার ফোনটির ইংরেজি রিভিউতে মন্তব্যকারী এক পাঠকের মতো অনেকের কাছেই বেশি হালকা মনে হবে। তবে আমাদের মধ্যে যাদের ভারী ফোন ব্যবহার করে অভ্যাস হয়ে গেছে, তাদের জন্য ফোনটি একটু ভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতা দেবে। আর তা মোটেই খারাপ কিছু নয়। মটোরোলা মটো জি এর সঙ্গে তুলনা করলে মটো জি এর চেয়েও সিম্ফনি রোর এ৫০ ফোন অনেক হালকা। আর এটি সত্যিই অবাক করার মতো।
এবারে চলুন ফোনের বাটন প্লেসমেন্ট নিয়ে কথা বলা যাক। বেশিরভাগ অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মতোই Symphony Roar A50 ফোনেরও পাওয়ার বাটন ও ভলিউম রকার দেয়া হয়েছে ফোনের ডান পাশে। ফলে ফোনটি হাতে নিয়ে সহজেই ভলিউম বাড়ানো কমানো কিংবা লক-আনলক করতে পারবেন। ৩.৫ মিলিমিটার হেডফোন জ্যাক দেয়া হয়েছে ফোনের উপরের অংশে। আর মাইক্রোইউএসবি পোর্ট রয়েছে ফোনের নিচের অংশে যেটি একইসঙ্গে চার্জিং পয়েন্ট ও ডাটা ক্যাবল ইনপুট হিসেবে কাজ করে।
আরো দেখুনঃ হ্যান্ডস-অন রিভিউঃ ওয়ালটন Primo RH
সিম্ফনি রোর এ৫০ ফোনটির ব্যাক কভার খুব সহজেই খুলে ফেলা যায়। প্রথম কয়েকবার মনে হচ্ছিল যেন ব্যাক কভারে কোনো সমস্যা আছে। কিন্তু পরে দেখা গেল ফোনটি ডিজাইনই করা হয়েছে এমনভাবে যেন সহজেই ব্যাক কভার খুলে ফেলা যায়। অবশ্য এটি আমার মটো জি এর ব্যাক কভার খোলার অভ্যাসের কারণেও হতে পারে। মটো জি’র ব্যাক কভার খোলা তুলনামূলক কঠিন। বিশেষ করে নখ বড় না হলে খুলতে বেশ বেগ পেতে হয়। সেই তুলনায় সিম্ফনির ব্যাক কভার খোলা বেশ সহজ।
সিম্ফনি আর মটো জি এর মধ্যে আরেকটি ব্যতিক্রম বিষয় হলো ব্যাটারি। মটো জি এর ব্যাটারি ইউজার নন-রিমুভেবল। অর্থাৎ, আপনি ব্যাটারি খুলতে পারবেন না। কিন্তু সিম্ফনি রোর এ৫০ ব্যবহার করতে গেলে আপনাকে ব্যাটারি খুলতেই হবে। কারণ, এর দু’টি সিম কার্ড স্লট এবং মাইক্রোএসডি মেমোরি কার্ড স্লটে কার্ড ঢুকাতে হলে ব্যাটারি খুলতে হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে, সিম্ফনি রোর এ৫০ ফোনের দু’টি সিম কার্ড স্লটই মাইক্রো-সিম ব্যবহার করে। তাই আপনার রেগুলার সিম কার্ড না কেটে এতে ঢুকাতে পারবেন না। তবে সুখবর হলো, দু’টি স্লটই ৩জি নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করে। তাই আপনাকে ৩জি নেটওয়ার্ক কোনটি সাপোর্ট করে এই চিন্তা করে সিম কার্ড ঢুকাতে হবে না।
সিম্ফনির ব্যাক কভার ধরতে বেশ আরামদায়ক। এটি মটো জি এর মতো রাবারের ব্যাক কভার নয়। রাবারাইজড ব্যাক কভার অনেক ক্ষেত্রে ধরতে সুবিধা হলেও একটি সমস্যা হলো হাত ঘামলে তা হালকা ভিজে যেতে পারে। মটো জি এর ব্যাক কভারে এই সমস্যা খানিকটা থাকলেও সিম্ফনি এদিক দিয়ে ভালো। রাবারাইজড না হলেও এটি যথেষ্ট খসখসে প্রকৃতির, ফলে আপনার হাত থেকে পিছলে পড়ে যাবার সম্ভাবনাও নেই।
সিম্ফনির রোর এ৫০ ফোনের লাউডস্পিকার রয়েছে পেছনের দিকে। অন্যান্য সিম্ফনি ফোনের মতোই পেছনে সিম্ফনি লোগোর পাশাপাশি নিচের দিকে রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ওয়ানের লোগো। সেই লোগোর ঠিক সঙ্গেই রয়েছে লাউড স্পিকার। এছাড়াও ফোনের সামনের দিকও যথেষ্টই প্রিমিয়াম ধরানার। বেজেল বা ফ্রেম বেশি মোটাও না বা সরুও না। এছাড়াও ফোনে রয়েছে নোটিফিকেশন এলইডি লাইট, যা আপনার ফোনে আসা সব না দেখা নোটিফিকেশন, মেসেজ, ইমেইল কিংবা মিসকলের সিগনাল দিতে থাকবে। এতে করে ফোন আনলক না করেই বুঝতে পারবেন ফোন আনলক করা দরকার কি না!
সব মিলিয়ে সিম্ফনির অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান ফোনটিতে এক রকম প্রিমিয়াম ফিল রয়েছে যা কমদামী ফোনে সাধারণত দেখা যায় না।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন