ই-মেইল এ আপডেট পেতে

We'll not spam mate! We promise.

রবিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৫

আইফোন: পেছন ফিরে দেখা


আজ থেকে প্রায় ৮ বছর আগে স্টিভ জবস সমগ্র দুনিয়ার টেক প্রেমি মানুষদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন প্রথম আইফোনটি। যদিও ব্যাপারটি জাদু দেখানোর পর্যায়ের নয়, তবুও মানুষ প্রায় জাদু দেখার মতইতো অবাক হয়েছিল সেদিন। কেননা, আইফোনের পূর্বে যেসকল স্মার্টফোন ছিল, সেগুলো ছিল অর্ধেক কী-বোর্ড এবং অর্ধেক স্ক্রিনের। সে সব স্মার্টফোনগুলোতে একটি ওয়েবসাইট সম্পুর্ন ভাবে লোড হত না, বিধায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেই সব দূর্বল স্মার্টফোনগুলোর জন্য তাদের মূল ওয়েব সাইটের দূর্বল মোবাইল ভার্সন তৈরি করতে হত।
কিন্তু হঠাৎ করেই, সেই ৮ বছর আগের আইফোন সব কিছু পালটে দিতে শুরু করল। এ যেন এক রুপকথার মতই। কেননা সেদিন আর আজকের আইফোনের মধ্যে যে পার্থক্য আমরা দেখতে পাই সেগুলো এক রাতের মধ্যেই জন্মায়নি। দীর্ঘ ৮টি বছর কেটে গেছে সেই প্রথম আইফোন এবং আজকের এই আইফোনের মধ্যে। বছরের বছর অ্যাপল নিত্যনতুন প্রযুক্তি, ফিচার যুক্ত করে গিয়েছে এই আইফোন ডিভাইসটিতে। আজকের স্ট্যান্ডার্ড আইফোনের কাছে সেই প্রথম আইফোনটি হয়তো একটি ইট ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না আপনার কাছে! তবে শুরুটা ছিল সেখান থেকেই, এর পরই হল বিবর্তন।
সেদিনের সেই প্রথম আইফোনটির আজ কতটা উন্নতি হয়েছে তা দেখানোর জন্য আজ আমি আপনাদের সামনে একটি ছোট-খাটো স্লাইড শো’র আয়োজন করেছি যার মাধ্যমে আশা করি সেই প্রথমের ক্র্যাপি আইফোন সম্পর্কে আপনাদের ধারণা পরিষ্কার হবে এবং নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন আজকে আপনার হাতের ডিভাইসটি ঠিক কতটা শক্তিশালী, কতটা কার্যক্ষম। চলুন, টাইম ট্রাভেলে উঠে পড়ুন।

ফিরে দেখা...

1
উপরের ছবিটি দেখুন। আজ পত্রিকা খুললেই আপনি স্মার্টফোনের বিজ্ঞাপন দেখতে পান, তাই না? উপরের ছবিটিকে আপনি ৮ বছর আগের কোন একটি স্মার্টফোনের বিজ্ঞাপন হিসেবে ধরে নিতে পারেন। এরকমই ছিল তখনকার স্মার্টফোন গুলোর কম্পিটিশন। আইফোন ছাড়া অন্য ডিভাইসগুলোকে দেখুন... অর্ধেক কী-বোর্ড আর অর্ধেক স্ক্রিনের আদিম স্মার্টফোন। যেখানে সেদিনের সেই ক্র্যাপি আইফোনও কিন্তু আজকের আইফোনের মতই স্মার্ট লাগছে।
2
মাঝে মাঝে পুরাতন ডিভাইগুলোর কথা স্মরণ করা উচিৎ, তবেই কিন্তু খুব সহজে এখনকার পরিবর্তনগুলো এক ঝটকায় চোখের সামনে চলে আসে।
3
প্রথম আইফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছিল EDGE বা 2G কানেকশন যা ছিল অত্যন্ত ধীর গতির। এটা মূলত ছিল ডায়াল-আপ স্পিড!
4
এছাড়াও, এই 2G কানেকশনটির অন্য একটি পীড়াদায়ক দিক ছিল যা হচ্ছে এই কানেকশনও শুধু AT&T প্রতিষ্ঠানটি সরবারহ করতে সক্ষম ছিল। এবং, সে সময়ে AT&T প্রতিষ্ঠানটির কিছু সমস্যা ছিল, যেমন – কল ড্রপ সমস্যা।
5
শুধু আইফোনই নয়, প্রায় সব স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তার পেছনে কিন্তু অ্যাপ স্টোর এবং বিভিন্ন রকম অ্যাপ কাজ করে থাকে। কিন্তু, অ্যাপল যখন তাদের এই প্রথম আইফোনটি তৈরি করেছিল সেসময় কোন অ্যাপ স্টোর ছিলোনা। বুঝতেই পারছেন, যেহেতু অ্যাপ-স্টোর ছিলোনা সেহেতু অ্যাংরি বার্ডস, ইনস্টাগ্রাম, ক্যান্ডি-ক্রাশ এগুলোও কিছু ছিলোনা !! এক কথায়, স্মার্ট ফোনটি স্মার্ট হওয়া স্বত্বেও ছিল বোরিং।
6
সে সময়ের প্রথম আইফোনটির ব্যাকগ্রাউন্ডের ওয়ালপেপার পরিবর্তন করা যেত না ফলে ব্যবহারকারীদের সেই কালো ব্যাক-গ্রাউন্ড নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হত।
7
উপরের ছবিতে একটি লাইন লেখা আছে দেখুন, ‘Now I can copy and paste on my iPhone AND I have a wide keyboard in Mail!’ হ্যাঁ, এখানে কপি-পেস্ট করার সুবিধাটিই যোগ করা হয়েছে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু আপনি কি জানেন, অ্যাপলের এই সুবিধাটি যোগ করতে দীর্ঘ ৩টি বছর সময় লেগেছিল?!
8
উপরের ছবিটি কি আপনার মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে? খুলেই বলি, প্রথম দিকের আইফোনটি সেট-আপ করতে একটি কম্পিউটারের প্রয়োজন হত। কম্পিউটারের সাহায্য ছাড়া তখন আইফোন সেট-আপ করা সম্ভব ছিল না। আর উপরের ছবিটি তখন কার যখন একটি কম্পিউটার ছাড়াই আইফোন সেট-আপের সুবিধা প্রদান করা হলো। তবে, এর মধ্যেও কেটে গিয়েছিল দীর্ঘ ৫টি বছর!
9
আজকে ব্রাউজিং, মেইল, মেসেজ ইত্যাদিতে আমরা কোয়ার্টি কীবোর্ড ল্যান্ডস্কেপের মাধ্যমে কত সহজেই না ব্যবহার করে থাকি। তবে প্রথমে কিন্তু এমন ছিলনা। কেননা, তখনকার টেক্সট মেসেজিং অ্যাপলিকেশন এবং ইমেইল অ্যাপলিকেশন ল্যান্ডস্কেপ মোডে কাজ করতো না।
10
এখনকার মত পূর্বে মেসেজের মধ্যে ছবি সংযুক্ত করার সুবিধা অর্থাৎ, এমএমএসের সুবিধাও ছিলনা।
11
টার্ন-বাই-টার্ন টাইপের ডিরেকশন অ্যাপলিকেশনও ছিলনা সেসময়। শুধু মাত্র যে অ্যাপলের কাছে ছিলনা – তাই নয়, বরং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছেও এরকম কোন অ্যাপলিকেশন ছিলনা।
12
সিম্ফনি – ওয়ালটনের ফ্রন্ট ক্যামেরাও এখন ৫ মেগাপিক্সেলের হয়! তবে সেসময়ের প্রথম আইফোনটির রিয়ার ক্যামেরা ছিল মাত্র ২ মেগাপিক্সেলের। শুধু তাই নয়, ক্যামেরাটি ভিডিও ধারণ করতে পারতো না!
13
এখনকার মত সে সময়ের আইফোনে ছিলনা কোন প্রকার নোটিফিকেশন সেন্টার, ছিলনা সিরি। যদিও এযুগেও বলা চলে এগুলো আধুনিক ফিচার তাই এগুলো খুব বেশি আশ্চর্যজনক নয় তবুও এগুলোই কিন্তু পরিবর্তন গুলোকে চমৎকারভাবে বুঝিয়ে দেয় সহজেই।
14
সবচাইতে মজার বিষয় হচ্ছে, তখন মাত্র ৪ গিগাবাইটের মডেলের জন্যেও খরচ করতে হতো ৪৯৯ ডলার! চিন্তা করুন একবার। এই টাকায় এখন আপনি ঠিক কোন স্মার্টফোনটি পেতে পারেন!

শেষ কথা

আজকের এই স্মৃতিচারণ এখানেই শেষ করছি। যেগুলো আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছি শুধু মাত্র সেগুলোই নয়, আরও অনেক পরিবর্তন এসেছে এখনকার আইফোনে। তবে উপরের গুলোই ছিল বেসিক পার্থক্য যা যে কাউকে এমনকি যে আইফোন ব্যবহার করেননি, তাকেও খুব সহজেই পরিবর্তন গুলো বুঝিয়ে দিতে যথেষ্ট। সেই ৮ বছরের আগের মিরাকল আইফোন এখনও সমান ভাবে দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছে, আরও নিত্য নতুন টেকনোলজি দিয়ে। বেঁচে থাকলে না হয় আরও ৮ বছর পর আবারো স্মৃতিচারণ করতে বসবো। আর তখন হয়তো সে সময়ের আইফোনের কাছে বর্তমানের আইফোনটিও একটি ‘ইট’ ছাড়া আর কিছুই হবেনা!

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন