আমাদের সভ্যতার দিকে নজর দিলে মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা উন্নতির চরমে পৌঁছে গেছি। শক্তিশালী শরীর ও মস্তিষ্ক- এর চাইতে বেশি মানুষের আর উন্নতি সম্ভব নয়। কিন্তু আসলে কি তাই? আসলেই কি মানুষের বিবর্তনের সমাপ্তি ঘটেছে নাকি আমাদের অলক্ষ্যেই একটু একটু করে এখনো চলছে বিবর্তনের এই প্রক্রিয়া?
মানুষের বিবর্তনের মূল প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কের ওপরে। কেন মানুষের অন্যান্য প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো এবং শুধু হোমো স্যাপিয়েন্স টিকে রইলো? এর উত্তর লুকিয়ে রয়েছে মানুষের মস্তিষ্কের ভেতরেই। মানুষের মস্তিষ্কের ওজন পুরো শরীরের মাত্র ২ শতাংশ, কিন্তু তা শরীরের মোটামুটি ২০ শতাংশ শক্তি খরচ করে থাকে। বিবর্তনের ফলে সবচাইতে বেশি পরিবর্তন এসেছে মানুষের নিওকর্টেক্সে। এটা হলো মস্তিষ্কের বাইরের দিকের অংশ যা বিমূর্ত চিন্তা, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, সহানুভূতি এবং ভাষার মতো ব্যাপারগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। বিবর্তন আরো অগ্রসর হতে থাকলে কি হবে? মানুষের শরীর আরো পাতলা হয়ে মস্তিষ্ক হয়ে উঠবে বিশাল? যেমনটা দেখা যায় বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে? এর আগ পর্যন্ত মানুষের মস্তিষ্কের আকৃতি ছিলো নির্ধারিত। কারণ জন্মগ্রহণের সময়ে বার্থ ক্যানাল দিয়ে বের হবার জন্য নির্দিষ্ট আকৃতি হতে হয় বাচ্চার মাথা। কিন্তু এখন সিজারিয়ান জন্ম সম্ভব বলে তেমন কোনো সীমাবদ্ধতা হয়তো ভবিষ্যতে থাকবে না।
পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর জনসংখ্যা বৃদ্ধি হলে তার বিবর্তনের প্রক্রিয়াও অনেক দ্রুত অগ্রসর হয়ে থাকে। কিন্তু এখন পৃথিবীতে যেমন স্থলভাগ কমে আসছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, এ কারণে পিথোভাইরাস নামের একটি ভাইরাস পাওয়া গেছে। এই ভাইরাসটি যদিও মানুষকে আক্রমণ করে না, কিন্তু এমন আরো ভাইরাস তো থাকতে পারে যারা মানুষের জন্য মারাত্মক। উদাহরণস্বরূপ, স্মল পক্সের ভাইরাস এখন আর পৃথিবীতে নেই বলে ধরা হয় কিন্তু যদি কোনো বরফের মাঝে তা আটকা পড়ে থাকে এবং ভবিষ্যতে আবার বের হয়ে আসে?
এমন অনেক সমস্যা জড়িত আছে বিবর্তনের সাথে। কিন্তু এটা নিঃসন্দেহে সত্যি যে মানুষের বিবর্তন থেমে যায়নি, তা চলেছে এখনো। এমনকি বিজ্ঞানীরা বলছেন “যতদিন মানুষ আছে, ততদিন চলবে মানুষের বিবর্তন”।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন